জিম্বাবুয়ের নিয়ন্ত্রণ দেশটির সেনাদের হাতে
জিম্বাবুয়েতে রাজনৈতিক সঙ্কট ঘনীভূত হওয়ার পর অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে রাজধানী হারারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, জিম্বাবুয়ের সেনাপ্রধান জেনারেল কনস্ট্যানটিনো চিয়েঙ্গার অনুগত বাহিনী মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন স্টেশন জেডবিসির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
এরপর বুধবার ওই টেলিভিশনেই এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে ঘিরে থাকা ‘অপরাধীদের দলকে’ লক্ষ্য করে। তবে ৯৩ বছর বয়সী মুগাবে ও তার পরিবার ‘সুস্থ ও নিরাপদে’ আছেন।
এই অভিযান শেষ হলেই দেশে দ্রুত ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতি’ ফিরে আসবে বলে ওই বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করেন সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র।
হারারেতে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে ঘোষণা আসার একদিন পর মঙ্গলবার রাজধানীতে সেনাবাহিনীর কয়েকটি ট্যাঙ্ক অবস্থান নেয়।
প্রেসিডেন্ট মুগাবে গত সপ্তাহে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়াকে বরখাস্ত করলে চলমান এই সঙ্কটের সূচনা হয়। নানগাগওয়াকে এতদিন মুগাবের উত্তরসূরী ভাবা হলেও সম্প্রতি তার জায়গায় ফার্স্ট লেডি গ্রেস মুগাবের নাম সামনে চলে আসে। ভাইস প্রেসিডেন্টকে বরখাস্ত করার পর দেশটির সেনাপ্রধান কনস্টানটিনো চিউয়েঙ্গা রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেন।
মুগাবেপত্নীর সঙ্গে নানগাগওয়ার এই বিরোধে ক্ষমতাসীন দল জানু-পিএফে বিভক্তি তৈরি হয়। এই পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সতর্ক করে গ্রেস মুগাব বলেন, নানগাগওয়া তার বিরোধিতাকারীদের খুন করতে চান।
মুগাবে ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ থেকে নানগাগওয়াকে সরিয়ে দিলে প্রতিক্রিয়া দেখান সেনা প্রধান চিয়েঙ্গা। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের টানাপড়েন মিটিয়ে দিতে তার বাহিনী প্রস্তুত।
এরপর জানু-পিএফ এর পক্ষ থেকে বলা হয়, দেশের শান্তি নষ্ট করতেই সেনাপ্রধান উসকানিমূলক ওই বক্তব্য দিয়েছেন, যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাল্টাপাল্টি এই বক্তব্যের মধ্যে পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে মোড় নেয়। মঙ্গলবার হারারের বাইরে বিভিন্ন সড়কে সেনাবাহিনীর ট্যাংক আর সাঁজোয়া বহর অবস্থান নিলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সেনাবাহিনী জেডবিসি টেলিভিশন ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার সময় বেশ কয়েকজন কর্মী মারধরের শিকার হন। ওই টেলিভিশনের কর্মীদের বলা হয়, সেনাবাহিনী তাদের নিরাপত্তা দিতেই এসেছে, সুতরাং তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।
বুধবার ভোরে রাজধানী হারারের উত্তরাঞ্চলীয় শহরতলীতে তীব্র গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।
বিক্ষুব্ধ সেনারা রাস্তায় চলন্ত গাড়িগুলো দ্রুত চলে যেতে বলে। হারারের একটি রাস্তায় আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের এক প্রতিবেদককে এক সেনাসদস্য বলেন, এটাকে তামাশা ভাবার কারণ নেই দ্রুত রাস্তা থেকে সরে যান।
ওই বক্তব্যের ঘণ্টা দুই পর সেনারা জেডবিসি সদর দপ্তর দখলে নেয়। এরপর তারা কর্মীদের কর্মস্থল ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এ সময় কয়েক জনকে হেনস্তা করা হয় বলে টেলিভিশনের কয়েক জন কর্মী সংবাদ মাধ্যমে অভিযোগ করেছেন।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন স্টেশন দখলে নেয়ার পর এক লিখিত বিবৃতিতে দেশটির সেনাবাহিনী জানায়, এটি 'চিহ্নিত অপরাধীদের' বিরুদ্ধে অভিযান। এটি সামরিক ক্যুয়ের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের বিষয় নয়। প্রেসিডেন্ট মুগাবে নিরাপদ আছেন বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকায় নিযুক্ত জিম্বাবুয়ের রাষ্ট্রদূত আইজ্যাক মোয়ো সামরিক অভ্যুত্থানের বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেন, সরকার বহাল আছে। সেনাবাহিনীর লিখিত বিবৃতিটিতে বলা হয়, আমরা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, মহামান্য রাষ্ট্রপ্রতি ও তার পরিবার নিরাপদ ও ভালো আছে। তাদের পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, আমাদের অভিযান অপরাধী ও যারা অপরাধ সংঘটিত করে সেই চক্রের বিরুদ্ধে, যাদের কারণে দেশ সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যতো দ্রুত সম্ভব আমরা আমাদের অভিযান শেষ করবো। আমরা আশা করি, পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হবে। এদিকে, মার্কিন পররাষ্ট্রদপ্তর সংকট সমাধানে জিম্বাবুয়ের সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। চলমান পরিস্থিতি তারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
সূত্র: বিবিসি ও রয়টার্স।